১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থিতার অপরিহার্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:১০:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৮৪ Time View

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলভিত্তি হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখান থেকেই শিশুরা শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ শুরু করে। এই বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকরা মাঠপর্যায়ে শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, অভিভাবক সচেতনতা এবং বিদ্যালয় পরিচালনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। তাঁদের এই অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে উচ্চতর পদে বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ প্রদান করা অপরিহার্য।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ কয়েকটি ধাপ চিন্হিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। বিশেষ করে আমার মতে বাস্তব অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার , শিক্ষার মান উন্নয়নে সরাসরি ভুমিকা, নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতার বিকাশ, পেশাগত উন্নয়ন সহ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমি মনে করি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যদি এই পদক্ষেপ গুলো নেওয়া যায় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সহজ হতো। আমি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের গুরুত্ব গুলো বিস্তারিত তুলে ধরছি।

১. বাস্তব অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার

সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও একাডেমিক সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝেন। তাঁদের এই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা যদি প্রধান শিক্ষক, এটিইও, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর বা পিটিআই ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজে লাগানো যায়, তবে নীতি ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ঘটবে।

২. শিক্ষার মানোন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা

প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিশুর জীবনের প্রথম একাডেমিক ভিত্তি। এই ভিত্তি শক্তিশালী করতে হলে নেতৃত্বের স্থানে থাকতে হবে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের, যারা বাস্তবিকভাবে জানেন কিভাবে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হয়। বিভাগীয় প্রার্থিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রশাসনিক পদে আসতে পারলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।

৩. নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতার বিকাশ

বিদ্যালয় পরিচালনা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে নেতৃত্বগুণ অপরিহার্য। সহকারী শিক্ষকরা মাঠ পর্যায়ে এসব দক্ষতা অর্জন করেন। বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ থাকলে তাঁদের এই নেতৃত্বগুণ প্রশাসনিক পদে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

৪. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন

পিটিআই বা ইউআরসি-তে প্রশিক্ষক হিসেবে যারা থাকবেন, তাঁদের শিশু শিক্ষার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার কারণে প্রশিক্ষণে বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরতে পারেন। এতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।

৫. পেশাগত উদ্দীপনা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন

উন্নীত হওয়ার সুযোগ না থাকলে শিক্ষকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়, যা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিভাগীয় প্রার্থিতা থাকলে তাঁরা উৎসাহিত হবেন, দায়িত্বশীলতা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে আরও মনোযোগী হবেন।

৬. প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা রক্ষা

বাইরের প্রার্থীরা নতুনভাবে পদে যোগ দিলে কাঠামো ও বাস্তব প্রেক্ষাপট বুঝতে সময় লাগে। কিন্তু বিভাগীয় প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ফলে প্রশাসনিক কাজের গতি ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

৭. স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির জ্ঞান

সহকারী শিক্ষকরা স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। প্রধান শিক্ষক বা এটিইও পদে তাঁরা স্থানীয় জনগণের সাথে সমন্বয় করতে বেশি সক্ষম হন। এর ফলে বিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।

৮. ন্যায্যতা ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ

সহকারী শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিভাগীয় প্রার্থিতা তাঁদের প্রতি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে এবং সংবিধানে বর্ণিত সমান সুযোগের অধিকার পূরণ করে।

৯. জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়ন

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-4) অনুযায়ী সকল শিশুর জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। এই লক্ষ্য অর্জনে দক্ষ শিক্ষক নেতৃত্ব অপরিহার্য। বিভাগীয় প্রার্থিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের উচ্চতর পদে নিয়োগ দিলে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।

সর্বশেষে সহকারী শিক্ষকরা সরাসরি শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ প্রদানের যোগ্যতা, স্থানীয় সমাজের সাথে সংযোগ এবং প্রশাসনিক জ্ঞানের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই তাঁদেরকে প্রধান শিক্ষক, এটিইও, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদে বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ প্রদান করা শুধু প্রয়োজন নয়, বরং সময়ের দাবিও বটে।

মোঃ আমিনুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক
দামকুড়াহাট সপ্রাবি
পবা, রাজশাহী।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থিতার অপরিহার্যতা

Update Time : ১০:১০:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলভিত্তি হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখান থেকেই শিশুরা শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপ শুরু করে। এই বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকরা মাঠপর্যায়ে শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, অভিভাবক সচেতনতা এবং বিদ্যালয় পরিচালনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। তাঁদের এই অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে উচ্চতর পদে বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ প্রদান করা অপরিহার্য।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ কয়েকটি ধাপ চিন্হিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। বিশেষ করে আমার মতে বাস্তব অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার , শিক্ষার মান উন্নয়নে সরাসরি ভুমিকা, নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতার বিকাশ, পেশাগত উন্নয়ন সহ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমি মনে করি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যদি এই পদক্ষেপ গুলো নেওয়া যায় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সহজ হতো। আমি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের গুরুত্ব গুলো বিস্তারিত তুলে ধরছি।

১. বাস্তব অভিজ্ঞতার সদ্ব্যবহার

সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিক ও একাডেমিক সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝেন। তাঁদের এই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা যদি প্রধান শিক্ষক, এটিইও, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর বা পিটিআই ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজে লাগানো যায়, তবে নীতি ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ঘটবে।

২. শিক্ষার মানোন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা

প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিশুর জীবনের প্রথম একাডেমিক ভিত্তি। এই ভিত্তি শক্তিশালী করতে হলে নেতৃত্বের স্থানে থাকতে হবে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের, যারা বাস্তবিকভাবে জানেন কিভাবে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হয়। বিভাগীয় প্রার্থিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রশাসনিক পদে আসতে পারলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।

৩. নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতার বিকাশ

বিদ্যালয় পরিচালনা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে নেতৃত্বগুণ অপরিহার্য। সহকারী শিক্ষকরা মাঠ পর্যায়ে এসব দক্ষতা অর্জন করেন। বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ থাকলে তাঁদের এই নেতৃত্বগুণ প্রশাসনিক পদে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

৪. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন

পিটিআই বা ইউআরসি-তে প্রশিক্ষক হিসেবে যারা থাকবেন, তাঁদের শিশু শিক্ষার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার কারণে প্রশিক্ষণে বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরতে পারেন। এতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।

৫. পেশাগত উদ্দীপনা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন

উন্নীত হওয়ার সুযোগ না থাকলে শিক্ষকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়, যা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিভাগীয় প্রার্থিতা থাকলে তাঁরা উৎসাহিত হবেন, দায়িত্বশীলতা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে আরও মনোযোগী হবেন।

৬. প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা রক্ষা

বাইরের প্রার্থীরা নতুনভাবে পদে যোগ দিলে কাঠামো ও বাস্তব প্রেক্ষাপট বুঝতে সময় লাগে। কিন্তু বিভাগীয় প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ফলে প্রশাসনিক কাজের গতি ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

৭. স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির জ্ঞান

সহকারী শিক্ষকরা স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। প্রধান শিক্ষক বা এটিইও পদে তাঁরা স্থানীয় জনগণের সাথে সমন্বয় করতে বেশি সক্ষম হন। এর ফলে বিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।

৮. ন্যায্যতা ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ

সহকারী শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিভাগীয় প্রার্থিতা তাঁদের প্রতি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে এবং সংবিধানে বর্ণিত সমান সুযোগের অধিকার পূরণ করে।

৯. জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়ন

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-4) অনুযায়ী সকল শিশুর জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। এই লক্ষ্য অর্জনে দক্ষ শিক্ষক নেতৃত্ব অপরিহার্য। বিভাগীয় প্রার্থিতার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের উচ্চতর পদে নিয়োগ দিলে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।

সর্বশেষে সহকারী শিক্ষকরা সরাসরি শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ প্রদানের যোগ্যতা, স্থানীয় সমাজের সাথে সংযোগ এবং প্রশাসনিক জ্ঞানের কারণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই তাঁদেরকে প্রধান শিক্ষক, এটিইও, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদে বিভাগীয় প্রার্থিতার সুযোগ প্রদান করা শুধু প্রয়োজন নয়, বরং সময়ের দাবিও বটে।

মোঃ আমিনুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক
দামকুড়াহাট সপ্রাবি
পবা, রাজশাহী।